সারাদেশ ব্যাপি প্রচারের জন্য আপনার বিজ্ঞাপনের দিন

Header ADS
সংবাদ শিরোনাম=ভূরুঙ্গামারীতে গৃহবধু হত্যায় জড়িত ৪ জনকে আটক, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইরাক ও আফগানের মতো শ্রীলঙ্কার হামলাও আমাদের আঘাত করেছে চরমোনাই পীর

উন্নয়নের সারথী কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীন এবং তাঁর স্বপ্নের কথা


বিশেষ প্রতিবেদনঃ কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের মূল প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই যে কেউ একটু হালকা ধাক্কা খেতে পারেন। এ কোথায় আসলাম ? সাজানো গোছানো পরিপাটি এক অবয়বের মাঝে সিঁড়ির নীচের অপ্রয়োজনীয় স্থানটুকুতে চোখ না বুলিয়ে কেউ দোতালায় উঠতেই পারবেন না। প্রশংসার দৃষ্টিতে নজর বুলাতে হবে । হালকা সুরে বাজছে কুড়িগ্রামের ঐতিহ্য ভাওয়াইয়া গান। দেয়ালে সাজানো থরে থরে কুড়িগ্রামের অতীত ঐতিহ্যের স্মারক সমূহ।
প্রবেশদ্বারের ডানে তাকালে আরো বিস্মিত হতে হবে। নিকট অতীতে ডানের দুটি কক্ষ ছিল এজলাস, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট। স্থান পরিবর্তন করে এখন এর প্রথম কক্ষটি হয়েছে ”জেলা ই সেবা কেন্দ্র”। পূর্ব দিকের বিশাল কক্ষটি হয়েছে ”স্বপ্নকুঁড়ি”র আবাস স্থল। যে কেউ এই স্বপ্নকুঁড়ি’র আয়োজন দেখলে মুগ্ধতার আবেশে আবেশিত হয়ে পড়বেন। নয়নাভিরাম ডেকোরেশনের মধ্যে কুড়িগ্রামের মূল ইতিহাস, ঐতিহ্য এবংএকে ঘিড়ে আগামী দিনের স্বপ্নের জালবুনা হয়েছে।
সম্প্রতি এই প্রতিবেদক নন্দিত, আলোচিত, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোছাঃ সুলতানা পারভীনের সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত একটি সাক্ষাৎ পর্বে অংশ গ্রহণ করেন। ঝকঝকে তকতকে সুপরিপাটি জেলা প্রশাসকের বিশাল এই কালেক্টরেট ভবন দেখলেই বুঝতে পারবেন মাত্র এক বছরেই কি আমূল পরিবর্তন সাধন করেছেন এই পরিশ্রমী জেলা প্রশাসক। চিন্তা, চেতনা, ভাবনায় যেমন পরিচ্ছন্ন তেমনি কর্মপদ্ধতিতে তিনি এনেছেন নতুনত্ব ও আধুনিকতার ছোঁয়া। সর্বস্তরেই যুগোপযুগী ডিজিটাল কর্মযজ্ঞের এক বিশাল আয়োজকের ভূমিকায় নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন কুড়িগ্রামের আলোচিত জেলা প্রশাসক মোছাঃ সুলতানা পারভীন।
আলাপচারিতায় জানালেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে নিরীহ ও মাটির মানুষের জনপদ এই কুড়িগ্রামে পেশাগত দায়িত্বের মাঝে আমি বিশেষ ভাবে কিছু একটা করতে চাই। নদীভাঙ্গা , প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার কুড়িগ্রাম জেলার মানুষগুলোকে স্বাবলম্বী করার জন্যে কিছুই না, তাদের হাত দুটোকে কাজ করার হাতে পরিণত করতে হবে শুধু। এখানকার মানুষের বিশাল কোন চাহিদা নেই। অল্পতেই তুষ্ট শান্তিপ্রিয় এই সকল মানুষের জন্যে ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখি, চেষ্টাও করছি। সকলের সার্বিক সহযোগিতাও পাচ্ছি।
মাত্র একবছর আগে, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের দায়িত্বভার গ্রহণের কিছুদিন পরেই ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া কুড়িগ্রামের অসহায় আনসার আলী ,স্ত্রী ফরিদা ও শিশু ফরিদুলরা রাজধানীর কলাবাগান ওভার ব্রিজের নীচে মানবেতর জীবনযাপন করত। অসুস্থ মা ফরিদা সহ পরিবারটির ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেন জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন। সন্তানসহ পুরো পরিবারটিকে কুড়িগ্রামে এনে পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়ে সমগ্র জেলা সহ সারাদেশে আলোচনায় চলে আসেন জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন।
কুড়িগ্রামের নয়টি উপজেলায় তিনি চষে বেড়ানো শুরু করলেন। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা,মসজিদ, মন্দির সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুললেন। এলাকাভিত্তিক স্থানীয় সমস্যাগুলো দল মত নির্বিশেষে সকলের পরামর্শে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্বাবধানে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করলেন। এর মাঝে মাত্র ছয় মাসের মাথায় জেলা প্রশাসকের বদলীর আদেশে ক্ষুব্ধ কুড়িগ্রাম জেলাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোছা. সুলতানা পারভীনের বদলীর আদেশ বাতিল করেন। কুড়িগ্রামের জনমতের প্রতি এ ছিল দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনের নজিরবিহীন সম্মান প্রদর্শন।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে উলিপুর সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানার্থে বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরির কাজ তিনি শুরু করেছেন। উলিপুরে শহীদ মিনারের পাশে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানার্থে ”বিজয় মঞ্চ” নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মুক্তিযুদ্ধ ‘৭১ এ প্রয়াত বীরপ্রতীক তারামন বিবি সহ রৌমারী এবং রাজীবপুর অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানার্থে অত্র অঞ্চল যে ”মুক্তাঞ্চল” ছিল, এর সরকারী স্বীকৃতি আদায় ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে বিশেষ উদ্যোগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন কাজ করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে গত ২৬ শে মার্চ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে এক ব্যতিক্রমধর্মী কর্মকান্ডের সূচনা করেছেন। জেলার জীবিত দুই হাজার ৭৩০জন মুক্তিযোদ্ধাদের দুই হাতের ছাপ সংরক্ষণ, তাঁদেরকে সম্মাননাপত্র প্রদান সহ তাঁদের জীবন বৃত্তান্ত সম্বলিত স্মরণিকা ”বীরগাথা” প্রকাশ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারোডোব গ্রামের অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান বলেন, এই প্রথম কোন ডিসি আমাদেরকে বিশেষভাবে সম্মান প্রদর্শন করেছেন। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ডিসি সুলতানা পারভীন এর কাছে কুড়িগ্রামের সকল মুক্তিযোদ্ধা আজীবন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে।

কুড়িগ্রাম কালেক্টরেট ভবন ও জর্জকোর্টের মধ্যবর্তী স্থানে পার্ক পুকুরটি সংস্কারে পদক্ষেপ নিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোছাঃ সুলতানা পারভীন। কাজ প্রায় শেষের পর্যায়ে। কোন এক সময় এই পুকুর পাড় ছিল ভাসমান পতিতা ও উদ্বাস্তুদের আড্ডাখানা। এখন পুরো পুকুর পাড় হবে জেলা শহরের সেরা বিনোদন ও হাঁটাহাঁটি করার স্থান।
কুড়িগ্রাম জেলাবাসীকে তিন স্তরে বিভাজন করে শিশু কিশোরদের জন্যে স্বপ্নকুঁড়ির মাধ্যমে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্যের ধারক বাহক হিসাবে গড়ে তোলা, যুবক যুবতীদেরকে কারিগরী শিক্ষা সহ আইটি সেক্টরে প্রশিক্ষিত করে বেকারত্ব দূরীকরণ এবং প্রবীণ বয়স্কদের জন্যে বিভিন্ন পুনর্বাসনমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা।
বলতে গেলে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছাঃ সুলতানা পারভীন কুড়িগ্রামের সার্বিক উন্নয়নে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন। প্রজাতন্ত্রের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি এই কাজগুলোর সফল পরিসমাপ্তির লক্ষ্যে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন। এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ এস এম আমিনুল ইসলাম বলেন, বর্তমান জেলা প্রশাসক মহোদয় কুড়িগ্রামের উন্নয়নের লক্ষ্যে যে যৌক্তিক পদক্ষেপ সমূহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গ্রহণ করেছেন তা বাস্তবায়ন হলে কুড়িগ্রামবাসী উপকৃত হবে।
কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাঈদ হাসান লোবান বলেন, বর্তমান জেলা প্রশাসক মোছাঃ সুলতানা পারভীন মহোদয় জেলার ক্রীড়ার মানোন্নয়ন সহ অন্যান্য সকল বিষয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। একজন ডিসি বা সরকারী কর্মকর্তার নিয়মিত কাজের বাইরে বর্তমান জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাজ আমরা কুড়িগ্রাম জেলাবাসী সম্মানের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করে আসছি। 













সুত্রঃ কুয়িক নিউজ বিডি
কিউএনবি/আয়শা/২৭শে এপ্রিল, ২০১৯ ইং/রাত ৯:৩৮

No comments

Powered by Blogger.